শাহজাহান কমর ভাই আর নেই।
নিজস্ব প্রতিবেদক
দৈনিক বাংলার দিগন্ত
আমার জন্য দুআ করো! শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো যাচ্ছে না। রমজান মাস শুরুর কয়েকদিন আগে ফোনে কথা হয়েছে। এটিই কমর ভাইযের সাথে ছিলো শেষ কথা। বলেছিলেন, নিয়মিত অফিস করছেন। জানতে চেয়েছেন কেমন আছি। স্বাভাবিক হয়েছি কি-না। ফোন রাখার আগে বললেন, শিপু সজল কাম করের, তোমার লাগি গুড নিউজ আছে, তুমি লন্ডন যাওয়ার পরে আমরা কেউরে সিলেট প্রতিনিধি করছি না। দেশও আইলে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারবায়।
আমার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল জাতীয় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার মফস্বল সম্পাদক শাহজাহান কমর ভাই মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থায়ী ঠিকানায় পাড়ি জমিয়েছেন। যে ঠিকায় যাওয়া যায় কিন্তু ফেরা হয় না। প্রথিতযশা সাংবাদিক শাহজাহান কমর একজন ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব। তার মিতব্যয়ী অমিত বিক্রম ব্যক্তিত্ব যে কাউকেই নিমিষেই মুগ্ধ করে ছাড়তো।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি পরোপকারী মহৎ অন্তঃপ্রাণ মানুষটির মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারছি না। এ মানুষটার কারণে আমি দেশের বিভিন্নস্থানে অগণিত শুভকাঙ্ক্ষী পেয়েছি। আমি শিপু হওয়ার পেছনে যার অবদান বলে কিংবা লিখে শেষ করার না।
সিলেটের একসময়ের তোখড় এ সাংবাদিক '৯০'র দশকে পাড়ি জমান রাজধানীতে। সেখানে তৎকালীন জাতীয় দৈনিক বাংলাবাজার(অধুনালুপ্ত) পত্রিকাতে জয়েন্ট করেন। তখন পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন আজকের দৈনিক মানবজীবন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।
বাংলাবাজার পত্রিকা হতে বেরিয়ে নব্বই দশকের শেষদিকে রঙ্গিন ট্যাবলয়েড মানবজমিন প্রতিষ্ঠা করেন জনাব, চৌধুরী। কিন্তু, শাহজাহান কমর থেকে যান বাংলাবাজার পত্রিকাতে। পরবর্তীতে বাংলাবাজার পত্রিকাটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চলতে চলতে একসময় বন্ধ হয়ে যায়। শাহজাহান কমর ফিরে আসেন বড়লেখার গ্রামতলাস্থ নিজ বাসভবনে।
পরবর্তীতে সাংবাদিক জনাব, নাইমুল ইসলাম খানের আহবানে নতুন সময়ের টানে যখন দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকা পরীক্ষামুলকভাবে সফল যাত্রা করে। তখনই তিনি নাইমুল ইসলামের ডাকে সাড়া দিয়ে দৈনিক আমাদের সময়ে কর্মজীবন শুরু করেন। আমাদের সময় ৪ পাতার এই বিশেষ পত্রিকাটি বেরোনোর পরপরই সে সময় হুলস্থুল ফেলে দেয় সমগ্র দেশে। তৎকালীন ওয়ান ইলেভেনের সময়কার সময়ে তখন দেখেছি তাজা তাজা খবর আসতো পত্রিকাটিতে। মানুষও পছন্দ করেছিলো পত্রিকাটিকে। কারণ পত্রিকাটিতে দিস্তা দিস্তা ভারী কাগজের ভাঁজ ছিলো না। এখনো সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা ও অক্ষুণ্ণ করে চলছে দৈনিক আমাদের সময়।
পাশাপাশি পত্রিকাটিতে দীর্ঘ ২ যুগেরও বেশি সময় কাজ করে যাবার প্রতিদান হিসাবে বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি পেয়ে মফস্বল সম্পাদক হিসাবে পদোন্নতি নিয়ে কাজ করেন শাহজাহান কমর।
সততা, নৈতিকতা, নিষ্ঠা, পরিমিতিবোধ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাঝ দিয়ে সর্বোপরি নীতি ও আদর্শ এবং পরিশ্রম দিয়ে তিনি এতকাল ধরে রয়েছিলের তার কর্মজীবন। আজ থেকে তিনি সারাজীবনের জন্য অবসরে চলে গেলেন! যে অবসরে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না। আল্লাহ ভালো এ মানুষটির জন্য বেহেশতে একটু জায়গা করে দিয়েন প্লিজ